সমবায় চা বাগান স্থাপনে পঞ্চগড় জেলার মাঝিপাড়া কৃষি খামার ক্ষুদ্র চা চাষী সমবায় সমিতি লিঃ এর সাফল্য
ভূমিকাঃ
দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে পঞ্চগড় জেলার সর্বত্রই সমতলভূমিতে চা-চাষ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চগড় জেলার সমবায় সমিতিগুলোও পিছিয়ে নেই। তেমনই চা-চাষে সফল একটি সমবায় সমিতির নাম ‘মাঝিপাড়া কৃষি খামার ক্ষুদ্র চা-চাষী সমবায় সমিতি লিঃ’।
সমিতি গঠনের প্রেক্ষাপটঃ
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া গ্রাম একটি সীমান্তঘেষা এলাকা। ঐ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমিতি গঠন করে এবং সমবায় বিভাগ হতে গত ২২/০৩/১৯৭৫ খ্রিঃ তারিখের ১০১০নং মূলে নিবন্ধন লাভ করে। নিবন্ধন লাভের পরে গ্রামের পাশে ২১৪ একর অনাবাদী খাস জমি সরকারের কাছ থেকে সমিতিটির নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে গ্রহন করে।
ইনোভেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সমবায় চা বাগান স্থাপনঃ
সরকারের নিকট হতে ২১৪ একর জমি সমিতিটির নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার পর অধিকাংশ জায়গা ছিল অনাবাদী। ফলে সদস্যদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছিল না। বিষয়টি অনুধাবন করে বর্তমান উপজেলা সমবায় অফিসার, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় জনাব মোঃ ফারুক হোসেন ‘অনাবাদী জমিতে চা চাষের মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’ এর জন্য একটি ইনোভেশন প্রকল্প গ্রহন করেন। তার প্রেক্ষিতে সদস্যদের চা-বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করেন এবং ২০০ একর জমিতে ‘সমবায় চা বাগান’ স্থাপন করেন, যা বর্তমানে দৃশ্যমান।
সমিতির বর্তমান কার্যক্রমঃ
বর্তমানে সমিতির মুল কার্যক্রম শেয়ার, সঞ্চয় আদায় করে মূলধন সৃষ্টি করা। গঠিত মূলধন দিয়ে সমবায় চা বাগানে বিনিয়োগের মাধ্যমে সভ্যগনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা। সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭১ জন এবং চা চাষ করে এই ৭১ জন সদস্যের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। সমিতির শেয়ার মুলধন এর পরিমান ১,১৩,৩৮৫/- টাকা এবং সঞ্চয় আমানত ২,৪৪,৬২৫/- টাকা, সংরক্ষিত তহবিল ৪৬,৫৫৮/৪৬ টাকা। সমিতির মূলধনের পরিমান ৪,০৪,৫৬৮/- টাকা। অনাবাদি জমিতে চা-চাষ এর মাধ্যমে বর্তমানে সমিতির প্রায় ২০০ একর জমিতে চা-চাষ করে ৭১ জন সমবায়ী সফল হয়েছেন। এছাড়া, সমিতি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চা-বাগানে ৪০০ জন শ্রমিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যার অধিকাংশই নারী শ্রমিক। সমিতি তার নিজস্ব জায়গায় ও অর্থায়নে ইতোমধ্যে ২(দুই) কক্ষ বিশিষ্ট অফিস ভবন এবং একটি মসজিদ স্থাপন করেছে। উল্লিখিত কার্যক্রমে অত্র সমিতি সরকার/ব্যক্তি/অন্য কোন বেসরকারী সংস্থা হতে কোন প্রকার আর্থিক সহায়তা গ্রহণ ব্যতীত সদস্যদের নিজস্ব পুঁজি, বিনিয়োগ, মেধা ও শ্রমের দ্বারা বর্তমান অবস্থানে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছে।
প্রশিক্ষনঃ
যে কোন উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল যথাযথ প্রশিক্ষণ। এই উপলব্ধি থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সাধারন সদস্যবৃন্দ সমিতির আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় ও সকল সদস্যদের কর্ম ও উৎপাদনমূখী করার লক্ষ্যে এ সমিতির একাধিক সদস্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান (আঞ্চলিক সমবায় শিক্ষায়তন, রংপুর ও ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষণ) হতে একাধিক বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। যেমনঃ-
ক) চা-চাষ
খ) হাঁস-মুরগী পালন
গ) গরু মোটাতাজাকরন
ঘ) মৎস্যচাষ, ইত্যাদি।
সামাজিক কর্মসূচীঃ
সমিতি শুধুমাত্র নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন সাধনে কাজ করছে না, বরং এ সমিতির কার্যক্রমের বাহিরে ব্যবস্থাপনা কমিটির আন্তরিকতায় নানামূখী উদ্যোগে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমসহ জনসচেতনা সৃষ্টিতে নিরলস ভুমিকা রেখে চলেছে। যেমনঃ-
ক) প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পরামর্শ ও টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়ন।
খ) মানবিক সহায়তা প্রদান।
গ) সচেতনতামূলকঃ পরিবার পরিকল্পনা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্য বিবাহ রোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধ, যৌতুক ও ইভটিজিং প্রতিরোধ ইত্যাদি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ
সমিতিতে বর্তমানে ২০০ একর চা বাগান হতে চল্লিশ দিন অন্তর অন্তর প্রতি একরে গড়ে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) কেজি করে চা-পাতা আহরন করা হচ্ছে। উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা স্থানীয় বিভিন্ন চা কারখানায় ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে সমিতির সদস্যগন আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও লাভের সিংহভাগই চা-কারখানার মালিকের পকেটে চলে যাচ্ছে। এতে তাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। তাদের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা একটি চা-কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। এছাড়া, ভবিষ্যতে তাদের নিজস্ব জায়গায় স্কুল/কলেজ/হাসপাতালসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
উপসংহারঃ
পরিশেষে, সমিতিটি চা চাষের মাধ্যমে উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় সমবায় বিভাগের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক, যুগ্ম-নিবন্ধক, উপ-নিবন্ধকসহ একাধিক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠপর্যায়ে সমিতির কার্যক্রম সরাসরি পরিদর্শন করে গেছেন ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই সমিতি আরো উন্নয়ন করবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে সমিতি তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হবে। সমিতির সদস্যরা শ্রম, মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ‘মাঝিপাড়া কৃষি খামার ক্ষুদ্র চা চাষী সমবায় সমিতি লিঃ’ স্ব-নির্ভরতা, কর্মসংস্থান, কর্ম সম্পাদন, এলাকার শান্তি শৃংখলা আনয়ন ও সাধারণ মানুষকে সমবায় আন্দোলনে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা দেশের জন্য একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS